পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে বড় নির্বাচনি বছর হবে ২০২৪। ২০২৩ সালের সীমান্তে দাঁড়িয়ে থাকা এই নতুন বছরে বিশ্বজুড়ে ৭৮টি দেশে ভোট অনুষ্ঠিত হবে। ওয়াশিংটন-ভিত্তিক থিঙ্ক ট্যাঙ্ক আটলান্টিক কাউন্সিলের বরাত দিয়ে জিইও টিভি জানিয়েছে, ২০২৪ সাল হবে পৃথিবীর ভাগ্য পরিবর্তনের বছর।
জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহ থেকে শুরু করে বছরের শেষ পর্যন্ত চলবে নির্বাচন। শক্তিশালী এবং ধনী দেশ থেকে শুরু করে কিছু স্বৈরাচারী ও দুর্বল রাষ্ট্রেও বাজবে ভোটের দামামা। সব মিলিয়ে আগামী বছর সর্বোচ্চ সংখ্যক নির্বাচন দেখবে বিশ্ব। তবে ব্রাজিল এবং তুরস্কসহ কিছু দেশে সাধারণ নির্বাচন না হলেও স্থানীয় বা পৌরসভা নির্বাচন হবে। দ্য গার্ডিয়ান, সিএনএন, জিইও টিভি, দ্য ইকোনমিস্ট।
আর এই ভোট উৎসব শুরু হবে বাংলাদেশ থেকে। নতুন বছরের (৭ জানুয়ারি) শুরুতেই নির্বাচনে পা রাখবে বাংলাদেশ। এবার জিতলে ক্ষমতার গদিতে ১৫ বছর পূরণ হবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। তার কদিন পরেই তাইওয়ানে ভোট (১৩ জানুয়ারী)। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই অঞ্চলের জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন হবে এবার। কারণ এটি তাইওয়ান প্রণালিতে ভবিষ্যতের সামুদ্রিক নিরাপত্তাকে প্রভাবিত করবে। ফেব্রুয়ারি মাসে পাকিস্তান এবং ইন্দোনেশিয়ায়। বিশ্বের জনবহুল দুই মুসলিম রাষ্ট্র। ৮ তারিখে হবে পাকিস্তানে। পরের সপ্তাহেই ইন্দোনেশিয়ায়। পাকিস্তানে ইতোমধ্যেই মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার আনুষ্ঠিকতা শুরু হয়েছে। ২৫ থেকে ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে মনোনয়নপত্রের যাচাই-বাছাই। ‘সেনা নিয়ন্ত্রিত’ এ নির্বাচনে পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজ পার্টির নেতা সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফই আবার ক্ষমতায় আসতে পারেন বলেই মন্তব্য করছে দেশটির রাজনৈতিক বিশ্লেষেকরা।
এদিকে রুশ গণমাধ্যমের ভবিষ্যদ্বাণী বলছে, নতুন বছরের ১৭ মার্চ রাশিয়ার নির্বাচনে আবারও জয়ী হতে পারেন প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে ক্ষমতায় থাকার পরেও আবার জয়ের মুকুট তারই মাথায় থাকবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে দেশটিতে। মে মাসে বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল গণতন্ত্র ভারতের সাধারণ নির্বাচন। ধারণা করা হচ্ছে. প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির তৃতীয় মেয়াদের আশা নিরাশায় ডুবতে পারে। কারণ স্বাধীন সাংবাদিকতার ওপর নিষেধাজ্ঞা, কাশ্মীরে নৃশংস সেনাবাহিনীর দমনপীড়নে প্রতিফলিত তার অস্বাভাবিক, স্বৈরাচারী প্রবণতা ভোটের ন্যায্যতা নিয়ে সন্দেহ তৈরি করেছে।
আফ্রিকার সবচেয়ে শিল্পোন্নত দেশ দক্ষিণ আফ্রিকার নির্বাচনও হবে একই মাসে। এবারের ভোটে দেশটির আমূল পরিবর্তন ঘটতে পারে সেখানে। ৩০ বছর আগে ১৯৯৪ সালে নেলসন ম্যান্ডেলার বর্ণবাদ যুগের অবসানের পর প্রথমবারের মতো আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেস (এএনসি) তার সামগ্রিক সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারাতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বেশিরভাগ আফ্রিকানরা অনিয়ন্ত্রিত শাসনব্যবস্থা থেকে নিজেকে মুক্ত করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে।
নতুন বছরের মার্চেই শেষ হবে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির পাঁচ বছরের মেয়াদ। যদিও দেশটিতে সামরিক আইনের অধীনে নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে। তবুও নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে কিয়েভ। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে নজর কাড়বে মেক্সিকোও। দুই নারী প্রার্থী সেখানে শীর্ষ পদের জন্য প্রতদ্বন্দ্বিতা করবেন। তবে প্রথমবারের মতো দেশটিতে নারী প্রেসিডেন্ট হতে পারেন ক্লডিয়া শিনবাউম। আর বছরের শেষের দিকে পুরো বিশ্বের চোখ থাকবে যুক্তরাষ্ট্রের দিকে। দেশটির প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নভেম্বরে অনুষ্ঠিত হবে। যেখানে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের চলবে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই। ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকও ২০২৪ সালেই সাধারণ নির্বাচনের কথা জানিয়েছেন। তবে নির্বাচনি তারিখ এখনো নির্ধারণ করা হয়নি।
২০২৪ সালে নির্বাচন করা অন্যান্য আফ্রিকান দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে- আলজেরিয়া, বতসোয়ানা, চাদ, কোমোরোস, ঘানা, মৌরিতানিয়া, মরিশাস, মোজাম্বিক, নামিবিয়া, রুয়ান্ডা, সেনেগাল, সোমালিল্যান্ড, দক্ষিণ সুদান, তিউনিসিয়া এবং টোগো। ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে- অস্ট্রিয়া, বেলজিয়াম, ক্রোয়েশিয়া এবং ফিনল্যান্ড। এছাড়াও রয়েছে পশ্চিম এশিয়ার দেশ ইরানও। কিছু নির্বাচন উন্মুক্ত, অবাধ ও সুষ্ঠু হলেও কিছু দেশে নির্বাচন হবে নিছক আনুষ্ঠানিকতা। তবে আসন্ন বছরের প্রতিযোগিতা গণতন্ত্রকে নতুন রূপ দিতে পারে।
Leave a Reply