ডেস্কঃ রাজধানীর জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে রোগী ফেলে একদল চিকিৎসকের বিরুদ্ধে বান্দরবানে আনন্দভ্রমণের অভিযোগ উঠেছে। গত তিন দিন ধরে তারা ঢাকার বাইরে। এতে সেবাবঞ্চিত হচ্ছেন সংশ্লিষ্ট ইউনিটের রোগীরা।
শনিবার থেকে সোমবার পর্যন্ত চিকিৎসক না পেয়ে সোমবার পরিচালকের কাছে অভিযোগ করছেন ভুক্তভোগী রোগী ও স্বজনরা।
হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীর জামাল উদ্দীন বলেন, একজন চিকিৎসকের ছুটি নেওয়ার অধিকার আছে। ডা. সালাহউদ্দিন উলুব্বী ও তার টিম ছুটি নিয়ে গেছেন।
রোগীদের সেবাদানের জন্য অন্য চিকিৎসককে দায়িত্ব দিয়ে গেছেন। আমি নিজেও তাকে ফোন করেছি। দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসক যদি দায়িত্ব পালন না করে থাকেন, সে ক্ষেত্রে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
গত শুক্রবার থেকে হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ডা. সালাহউদ্দিন উলুব্বীর তত্ত্বাবধানে ভর্তি হন কুড়িল বিশ্বরোড এলাকার বাসিন্দা মো. মাসুদ রানা। হাসপাতালের পঞ্চম তলার ৮নং ওয়ার্ডের ৬ নম্বর বিছানায় আছেন এই রোগী।
তিনি কাছে অভিযোগ করেন, আমার ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ আছে। এরই মধ্যে হার্টের সমস্যায় শুক্রবার হাসপাতালটিতে ভর্তি হই। নার্সরা দৈনিক দুইবার নাভিতে ইনজেকশন পুশ ও ট্যাবলেট দিচ্ছেন। কিন্তু কোনো চিকিৎসক আসেননি।
নার্সরা জানিয়েছেন, তাদের ইউনিটের ১২ সদস্যের চিকিৎক টিম শুক্রবার বান্দরবান ঘুরতে গেছেন। তারা না আসা পর্যন্ত রোগীদের অপেক্ষা করতে হবে।
তিনি বলেন, বিষয়টি জানাতে পরিচালকের কক্ষে গেলে সেখানে একজন চিকিৎসক কাগজপত্র দেখে আজকের দিনটা অপেক্ষা করতে বলেন। আমি চলে যেতে চাইলে তিনি ডা. সালাউদ্দিন উলুব্বী এলে ভালোভাবে দেখবেন বলে আশ্বস্ত করেন।
এ ছাড়া পরিচালক ঘটনাটি শুনে ডা. সালাহউদ্দিন উলুব্বীকে তাৎক্ষণিক ফোন দেন। আমার ফাইল দেখে পরিচালক বলেন, তুমি স্ট্রোক করেছ। তোমার এনজিওগ্রাম করাতে হবে। আমি একজন চিকিৎসককে বলে দিচ্ছি। তিনি সহায়তা করবেন। পাশের সাত নম্বর বিছানায় ভর্তি কামরুল ইসলাম (৩৫) এসেছেন নরসিংদী থেকে।
তিনি বলেন, বুকের ডান পাশে তীব্র ব্যথা হওয়ায় শুক্রবার অধ্যাপক সালাহউদ্দিন উলুব্বীর তত্ত্বাবধানে এখানে ভর্তি হই। এখনো ব্যথা সারেনি। ভর্তির পর থেকে এখন পর্যন্ত তিনি কোনো চিকিৎসকের দেখা পাননি। নার্সরাও এ বিষয়ে কিছু জানেন না। হাসপাতাল পরিচালকের কাছে অভিযোগ করলে তিনি ব্যবস্থা নেবেন বলে জানান। পরে একজন নার্স এসে ইনজেকশন কেনার স্লিপ লিখে দিয়ে চলে গেছেন।
এখানে ভর্তির পর থেকে দৈনিক একটি ইনজেকশন ও সন্ধ্যায় কয়েকটি ট্যাবলেট দেওয়া ছাড়া কোনো কিছুই করছে না। এদিকে রাত এলেই ব্যথায় অস্থির লাগে।
নাম না প্রকাশের শর্তে হাসপাতালের দুই চিকিৎসক বলেন, নির্ধারিত ভর্তির দিনে একজন অধ্যাপকের অধীনে অন্তত ১০০ রোগী ভর্তি হয়। পরদিন পোস্ট এডমিশনে কিছু রোগীকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
এ ছাড়া আগে থেকেই কিছু রোগী ভর্তি থাকে। ২৫ মার্চ ডা. উলুব্বীর তত্ত্বাবধানে শিডিউল ভর্তি ছাড়াও আগের বেশ কিছু রোগী আছেন। কিন্তু তিনি ও তার টিম টানা তিন দিন হাসপাতালে নেই। চিকিৎসক হিসাবে এমনটা করা মোটেও উচিত হয়নি। বিষয়টা সম্পর্কে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
জানতে চাইলে ডা. সালাহউদ্দিন উলুব্বী সোমবার দুপুরে বলেন, তারা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে বান্দরবান এসেছেন। পাশাপাশি তার ইউনিটের রোগীদের দেখভালের জন্য সহযোগী অধ্যাপক ডা. প্রদীপ কর্মকারকে দায়িত্ব দিয়েছেন। আজ সহযোগী অধ্যাপক ডা. পিনাকী রঞ্জনকে ওয়ার্ডগুলোতে পাঠিয়েছেন। ডা. পিনাকী ২০ ও ৩০নং ওয়ার্ড ঘুরে রোগী দেখছেন। ইতোমধ্যে অর্ধেক রোগী দেখা শেষ হয়ে গেছে। আমরা আজকেই ঢাকায় ফিরছি।
কিন্তু পরক্ষণেই বেশ কয়েকজন রোগী জানান, তাদের কাছে কোনো চিকিৎসক আসেননি।
Leave a Reply